ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা অর্জনের কৌশল কি

ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা অর্জনের কৌশল কি?

ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা অর্জনের কৌশল কি?

ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ক্যারিয়ার। ফ্রিল্যান্সিং এখন তরুণ-তরুণীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু কারণ ঘরে বসেই আয় করার সুযোগ এবং নিজের পছন্দের  সময়ে কাজ করার সুযোগ ।লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী তাদের পছন্দের কাজ করার মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেছে। তাই এই তরুণদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। যেহেতু তাদের অনেকেই সফল, তবে ব্যর্থতার তালিকাও ছোট নয়। অনেক মানুষ তাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সফলতা উপলব্ধি করতে পারে না কারণ তাদের সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব রয়েছে।

একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া মানে শুধু আপনার কাজে ভালো হওয়া নয়। বরং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে  অসম প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে। তবেই আপনি আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারে সফল হতে পারবেন।

দক্ষতার ক্ষেত্র নির্বাচন

প্রথমত, আপনি যে কাজটি করতে চান সেটাতে আপনি নিজে আগ্রহী কি না সেটা নিশ্চিত হতে হবে। আপনি যে কাজটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, আপনি সেই কাজের উপর আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার ফোকাস করতে পারবেন। নাহলে, আপনি হোঁচট খাবেন এবং মানসিক বিষণ্নতায় ভুগবেন যদি আপনি এমন কিছু করেন যেটাতে আপনি আগ্রহি নন। ধরা যাক আপনি ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ফ্রিল্যান্স করতে চান কিন্তু প্রোগ্রামিংকে ভয় পান। যদি এমনটি হয়, তাহলে আপনি বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারবেন না এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য কাজটি করতে আগ্রহ থাকবে না। তাই ভালভাবে নিজের আগ্রহ, নিজের পারদর্শীতাকে খুজুন।

দক্ষতা বৃদ্ধি

সব পেশায় প্রতিযোগিতা রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং এর ব্যতিক্রম নয়। তাই এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হলে আপনাকে অন্যদের চেয়ে বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে। আপনি যে ফিল্ডে ফ্রিল্যান্সিং করছেন তার স্পেসিফিকেশন জানা ও বোঝার চেষ্টা করুন এবং সবসময় নিজেকে আপডেট রাখুন। সময়ের সাথে সাথে, আপনার পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আপনার কাজে বৈচিত্র্য যোগ করা উচিত। ধরুন আপনি একজন কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ শুরু করবেন বা কাজ করেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত লেখার মাধ্যমে আপনার লেখার ধরন পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। আপনার লেখার উপস্থাপনা সুন্দর এবং সাবলীল করার চেষ্টা করুন। এইভাবে, আপনাকে অবশ্যই নিজের মধ্যে থেকে আপনার কাজের দক্ষতা উন্নত করার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

সফট স্কিলস ডেভেলপমেন্ট

একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফল হতে হলে নিজের কাজে ভালো হওয়াই যথেষ্ট নয়। এছাড়াও, আপনার নিজের মধ্যে কিছু সফট স্কিল গড়ে তুলতে হবে যেমনঃ যোগাযোগ, নেটওয়ার্কিং, টাইম ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতাও উন্নত করতে হবে। একজন ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই অ্যাসাইনমেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। এবং যেহেতু বেশিরভাগ মার্কেটপ্লেসের গ্রাহকরা পশ্চিমা দেশগুলি থেকে আসেন, তাই ইংরেজি জ্ঞান ছাড়া সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। অতএব, আপনার যদি ইংরেজিতে ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে ক্লায়েন্টের সাথে একদিনে যোগাযোগ করলে আর কোনো সমস্যা হবে না। একইভাবে, এই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আপনার পরবর্তী প্রজেক্ট পাওয়াটা একটু মসৃণ হবে।

আকর্ষণীয় প্রোফাইল তৈরী

অনেক ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেসে যেকোনো কাজের জন্য বিড করে। প্রায় সব বায়ার বিডিংয়ের সময় একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রোফাইল দেখেন। প্রোফাইল দেখে একজন বায়ার  সিদ্ধান্ত নেন যে আপনি কাজের জন্য যোগ্য কিনা বা আপনি কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন কিনা। অতএব, আপনি যে মার্কেটপ্লেসেই থাকুন না কেন, একটি আকর্ষক এবং তথ্যপূর্ণ প্রোফাইল হল কাজ পাওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি। আপনার প্রোফাইল যতটা সম্ভব সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করুন। প্রোফাইলে আপনার আগের কাজের উদাহরণ সহ একটি পোর্টফোলিও যোগ করুন। এটি বায়ারদের একটি ধারণা দেবে যে আপনি অতীতে কী ধরনের কাজ করেছেন। আর যদি সম্ভব হয়, কোনো একটি কাজ করলে সে কাজগুলোর 5 star সহ ঐ ক্লায়েন্টের ফিডব্যাক নিয়ে রাখুন ।এটি আপনার কাজের পরবর্তী ক্রেতাকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখবে, আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলবে।

বেশিক্ষণ অনলাইনে থাকা

বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই  পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আসে। আর এসব দেশের সঙ্গে আমাদের সময়ের পার্থক্য চার থেকে বারো ঘণ্টা। এর মানে বেশিরভাগ কাজ রাতেই হয়। তাই আপনাকে রাতে বেশির ভাগ সময় অনলাইনে থাকতে হবে। যাতে কোনো একটি কাজ বায়ার দ্বারা সাবমিট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি আবেদন করতে পারেন। যদি আপনি কোনো একটি কাজ সাবমিট করার সাথে সাথেই আবেদন করেন তবে বায়ারের সাথে আপনার দ্রুত যোগাযোগের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যা আপনাকে অন্যদের তুলনায় কাজটি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে।

কাজে আবেদনের ক্ষেত্রে সচেতনতা

যেকোনো কাজে আবেদনের পূর্বে বায়ারের দেওয়া রিকোয়ারমেন্ট পুরোপুরিভাবে বুঝে নিবেন। সেই রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী যদি আপনি কাজটি করতে পারবেন বলে মনে করেন তবেই আপনি ঐ কাজটিতে আবেদন করবেন, অন্যথায় করবেন নাহ। কারণ আপনার যদি পুরো কাজটি সম্পূর্ণ করার দক্ষতা না থাকে, আর আপনি যদি কাজটি পান তবে এটি আপনার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

নিখুঁতভাবে কাজ করা

আপনি যখন একটি কাজ পাবেন, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এটি করার চেষ্টা করুন। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে কাজটি পরিচালনা করার সময়, ক্লায়েন্টের দিকনির্দেশনা এবং পছন্দগুলি বিবেচনা করুন। সেইসঙ্গে ডেলিভারি টাইমের দিকেও খেয়াল রাখবেন। যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজটি ক্লায়েন্টের নিকট পৌছে দিতে পারেন। আর কাজ করার সময় যখন ক্লায়েন্টের সাথে যখন যোগাযোগ করবেন তখন সর্বোপরি ক্লায়েন্টের সাথে যথাসম্ভন ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। যাতে গ্রাহক আপনার কাজের দক্ষতা এবং ভাল যোগাযোগ দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয় এবং আপনাকে পরবর্তী প্রকল্পগুলি দিতে আগ্রহী হয়।

কাজের সংকট মোকাবিলা

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আপনার কাজ পাওয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়। একটি নির্দিষ্ট মাসে আপনি অনেক কাজ পেতে পারেন। আবার এমনটিও হতে পারে যে কোন কোন মাসে পর্যাপ্ত কাজ নাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখবেন বেশি সময় যাবত যেসব প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন,সেই প্রজেক্টগুলোতে কাজ করার। এবং এই ক্ষেত্রে, আপনাকে একজন বায়ারের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হওয়া এড়াতে হবে। একজন গ্রাহকের সাথে কাজ করার পাশাপাশি, অন্যান্য গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগও বজায় রাখতে হবে। সুতরাং আপনি যদি এই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কোন কাজ না পান, আপনি অবিলম্বে অন্য ক্লায়েন্টের জন্য কাজ শুরু করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ

ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ইংরেজি জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে সহজ কাজ কোনটি ?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *