Why-we-should-wake-up-in-the-early-morning

কেন সকালে দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে হবে আমাদের?

আমরা অনেকেই ভাবি আমরা সকালে ঘুম থেক উঠব কিন্তু পারিনা। নানান জটিলতা থাকলেও আমাদের আসলে সকাল ৫টার মাঝে উঠে যেতে হবে। কারণ, সকালে সময় আমরা যাই করি না কেন, তা আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি করে। সকালে করা যেকোনো কাজের আউটপুট অন্যান্য সময়ে করা কাজের চেয়ে তিনগুণ।

প্রথমদিকে, ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে ওঠা কঠিন এবং বিরক্তিকর মনে হতে পারে কিন্তু আপনি যখন একবার ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করতে শুরু করবেন তখন আপনার দিন অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে এবং আপনি অসাধারণ হয়ে উঠবেন সর্বক্ষেত্রে।
সকালে গভীরভাবে আমাদের মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে যা আমাদের আনন্দিত করে। সকালে আমরা যেকোনো কাজে মনোনিবেশ করতে পারি এবং যেকোনো সমস্যার মূল কারণ নিয়ে কাজ করতে পারি। ভোর ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমাদের ব্রেইন ফাংশন 100% কাজ করে।
সকালের সময়, সৃষ্টিকর্তা আমাদের ৩ টি বন্ধু উপহার দিয়েছেনঃ

  1. নীরবতা
  2. নির্জনতা
  3. নিস্তব্ধতা

আমাদের মনের ৩ টি অবস্থা রয়েছেঃ

  1. থিটা অবস্থা – থিটা অবস্থায় আমাদের কর্মক্ষম শক্তি একদম কম এবং এ সময় আমরা কোনও কাজ করতে চাই না এবং আমাদের মন খুব দ্রুত বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আমরা সাধারণত সন্ধ্যার সময় থিটা অবস্থায় থাকি।
  2. আলফা অবস্থা – আলফা অবস্থায় আমরা 100% প্রচেষ্টা দেই এবং আমাদের 60% কাজ সম্পন্ন হয়। আমরা সাধারণত দিনের বেলায় আলফা অবস্থায় থাকি।
  3. বিটা অবস্থা / ফ্লো বা প্রবাহ অবস্থা — প্রবাহ অবস্থার বিটা স্টেট হল সবচেয়ে উৎপাদনশীল অবস্থা। এই অবস্থা সর্বাধিক প্রোডাক্টিভ সময় 3S এর (নীরবতা, নির্জনতা, নিস্তব্ধতা) জন্য। বিটা অবস্থায়, কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) হ্রাস পায় এবং ডোপামিন এবং সেরোটোনিন (সুখী হরমোন) নিঃসৃত হয়। আপনার কাজের বা পড়ালেখার সর্বোচ্চ আউটফুট বা প্রোডাক্টিভিটির জন্য বিটা স্টেট ছাড়া অন্য কোন সময়ের প্রয়োজন হয় না যদি আপনি ভোর ৫ টায় আপনার সকাল শুরু করতে পারেন।

ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে ওঠা আপনার উত্পাদনশীলতা বাড়াবে এবং আপনাকে সুখী মানুষে পরিণত করবে। আচ্ছা ভাবুন তো আপনি যদি আপনার সমস্ত দিনের কাজ প্রথম ৩ ঘন্টায় সম্পন্ন করতে পারেন তবে আপনার কেমন লাগবে!

যাঁরা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে—
* রাত জেগে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। এমনকি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ ইন্টারনেটের রাতজাগা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
* শোয়ার ঘর থেকে কম্পিউটার বা মুঠোফোন দূরে রাখুন।
* ঠিকমতো ঘুমানোর জন্য ঘরের পরিবেশও ঠিক রাখা প্রয়োজন। ঘর অন্ধকার ও ঠান্ডা থাকলে ঠিকমতো ঘুমানো যাবে।
* রাতের খাবার আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই শেষ করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ঘুমাতে যান।
* একজন সুস্থ মানুষের জন্য আট ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। তাই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়লে অনেক সকালেই ঘুম থেকে ওঠা যাবে।
* সকালে ওঠার অভ্যাস করার জন্য অ্যালার্ম ঘড়ি রাখতে পারেন শোয়ার ঘরে। তবে ঘড়িটা অবশ্যই খাট থেকে খানিকটা দূরে রাখুন, যাতে করে সেটা বাজলে উঠে গিয়ে বন্ধ করতে হয়।

কীভাবে ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করবেন?
* সকালে ওঠার অভ্যাসের শুরুতেই বড়সড় পরিবর্তন না করে সময় নিয়ে অভ্যাস করুন। প্রথম দিকে নিয়মিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে ওঠার চেষ্টা করুন। এর কয়েক দিন পরে আবার ১৫ মিনিট এগিয়ে নিন। এভাবে ওঠার চেষ্টা করলে সেটা সহজেই অভ্যাসে রূপ নেবে।
* সকালে দ্রুত ওঠার জন্য আগেভাগে ঘুমিয়ে পড়া দরকার। তাহলে ঘুমের সমস্যা হবে না।
* অ্যালার্ম বাজার পর মস্তিষ্ককে ভাবার সময় না দিয়ে দ্রুত উঠে রুমের বাইরে চলে আসুন। সকালে উঠেই ব্রাশ করা বা অন্য কোনো কাজ শুরু করুন।
* সকালে নিজের জন্য একটা ভালো উপলক্ষ তৈরি রাখুন। যেমন গান শোনা, লেখার অভ্যাস ইত্যাদি; যা নিজেকে আকৃষ্ট করবে এমন কোনো বিষয় ভেবে রাখুন।
* সকালে উঠে মানসিক প্রশান্তির জন্য নিজেই একটু চা-কফি তৈরি, সূর্যোদয় দেখা, বাগান করা, নাশতা তৈরি বা বই পড়ার মতো কাজও করতে পারেন।

দেরীতে ঘুম থেকে উঠলে কি সমস্যা হয়?

অনেকেই রাতে লম্বা সময় জেগে থাকেন। অন্যদিকে সকালে দেরি করে ওঠেন। অন্যদিকে আর একদল আছেন যারা একদম সকাল সকাল বিছানা থেকে উঠে পড়েন।  বিজ্ঞানীরা এই দুই ধরনের মানুষের মস্তিষ্কে তাদের অভ্যাসের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন।

বিজ্ঞানীরা দেরিতে ও ভোরে ওঠা দুই দল লোকের মস্তিষ্কে এমআরআই স্ক্যান করেছেন। এরপর সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত তাদের নানা রকম কাজ করতে দেওয়া হয়েছে।  একইসঙ্গে দিনের বেলায় তাদের ঘুম ভাব কতটা হয় সেটি জানাতে বলা হয়েছে। দেখা গেছে যে অংশ সাধারণত মানুষের চেতনা তৈরি করে, যারা রাত জাগেন তাদের মস্তিষ্কের সেই অংশের সাথে সংযোগ কম থাকে।  বিজ্ঞানীরা বলছেন তাদের মনোযোগ কম থাকে, কোনোকিছুতে প্রতিক্রিয়া বিলম্বিত হয় এবং তাদের ঘুম ঘুম ভাব বেশি থাকে।  আর যারা সকালে ওঠেন তাদের ঘুম ভাব কম থাকে। তারা কাজগুলোও দ্রুত করেন।তাদের কর্মক্ষমতাও সারা দিনভর ভালো দেখা গেছে।  কিন্তু যারা রাত জাগেন তারা রাত আটটার পর একেবারে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সেসময় তাদের ঘুম ভাব কমে যায় ও প্রতিক্রিয়া দ্রুত হয়।

রিতে ঘুমানো ও দেরিতে ওঠা ব্যক্তিদের জীবনে কী ঘটে

গবেষকদের মতে, ৪০ থেকে ৫০% মানুষ দেরিতে ঘুমানো ও দেরিতে ওঠা পছন্দ করেন। রাত জাগা আর দেরিতে ওঠা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যে এর কী প্রভাব পড়ে, স্বাভাবিক রুটিনের যেসব কার্যক্রম রয়েছে যেমন সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে বা স্কুলে যাওয়ার জন্য তারা কতটা উপযোগী সেনিয়ে আরও গবেষণার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণাটির প্রধান ড. এলিস ফেসার-চাইল্ডস বলছেন, “এমন মানুষদের স্কুল জীবনে সকালে উঠতে হয়, কর্মজীবনে হয়ত আরও আগে উঠতে হয়। সারাজীবন তাদের শরীরের ছন্দের বিপরীতে লড়াই করে কাজ করতে হয়।”

তিনি বলছেন, “শরীরের ছন্দের বিপরীতে কাজ করলে তাদের কর্মদক্ষতা ও স্বাস্থ্য দুটোতেই সম্ভবত নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সকালের দিকে তাদের কাজের দক্ষতা বেশ কম থাকতে পারে।”

তিনি মনে করেন, সমাজে সময়ের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা তাদের জন্য নমনীয় হলে হয়ত তাদের কর্মদক্ষতা ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দুটোই ভিন্ন হতো।

 তাই আমাদের সবার উচিত সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গঠন করা।
তবেই আমাদের জীবন হয়ে উঠবে পরিপূর্ণ সুন্দর।
সূত্র: বিবিসি, মেডিকেল জার্নাল

অন্যান্য পোস্ট যা আপনার দিনবদলের জন্যে কাজে লাগতে পারে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *