সম্প্রতি সিরিয়া ও তুরস্কে হয়ে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প ,আমাদের ভূমিকম্প নিয়ে আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে। ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ ও আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। কেন ভূমিকম্প হয় বা যখন ভূমিকম্প হয় তখন কী করতে হবে তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশ ভূমিকম্প প্রবণ না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
আজকের আর্টিকেলে আমরা ভূমিকম্প সম্পর্কে কিছু সাধারণ ধারণা এবং কেন ভূমিকম্প হয় তা জানতে যাচ্ছি। ভূমিকম্প হলে আমাদের করণীয় কি তা নিয়েও আলোচনা করব। প্রত্যেকেরই ভূমিকম্প সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। আপনার যদি এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে তবে আপনি এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবেন ।
ভূমিকম্প কেন হয়?
সহজ ভাষায় ভূমিকম্প মানে হল কম্পন । ভূমিকম্প কেন হয় তা বোঝার জন্য আমাদের পৃথিবীর পৃষ্ঠের গঠন সম্পর্কেও কিছু জানতে হবে। ভু-অভ্যন্তর অসংখ্য শিলায় ভরা। ভূমিকম্পের সূত্রপাত তখনই হয় যখন একটি শিলা অন্য শিলার সাথে ধাক্কা লাগে বা সরে যায় । ভূমিকম্প মুলত তিনটি কারণের জন্য হয় । যথা: পৃথিবীর পৃষ্ঠের আকস্মিক পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং ভূমিধস। তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প মূলত এরাবিয়ান ও এনাটোলিয়ান প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে হয়েছে ।
ভূমিকম্পের জন্য ফল্ট লাইনেরও ভূমিকা রয়েছে । ভূত্বকের বড় অংশগুলোকে টেকটোনিক ফল্ট বলা হয় । দুটি প্লেটের মধ্যে ফাটলকে ফল্ট লাইনও বলা হয়। ভূগর্ভে সঞ্চিত গ্যাস এই ফাটল বা ফল্টের মধ্য দিয়ে উত্থিত হওয়ার সাথে সাথে গ্যাসের স্থানে একটি ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়। তখন ভূপৃষ্ঠের চাপ দ্রুত এই শূন্যস্থান পূরণ করতে চায়। এতে পৃথিবীর অভ্যন্তরের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্প হলে আমাদের করণীয় কি কি?
ভূমিকম্প হলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই ভূমিকম্প হওয়ার আগেই আমাদের সতর্ক থাকা উচিৎ । আপনার বাড়ি তৈরির সময় ভূমিকম্প প্রতিরোধক করে নির্মাণ করলে অনেকাংশেই আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন।
তবে ভূমিকম্প শুরু হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়া উচিত। ভূমিকম্পের সময়, আপনাকে উত্তেজিত না হয়ে শান্তভাবে চিন্তা করতে হবে এবং কাজ করতে হবে। বাইরে থাকলে ঘর বা দালানের মধ্যে যাওয়া উচিত নয় ফাঁকা স্থানে অবস্থান নিতে হবে । আপনি যদি বিল্ডিংয়ের নিচতলায় থাকেন তবে আপনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আপনি যদি একটি বহুতল বিল্ডিংয়ের উপরে থাকেন তবে আপনার বাইরে বের হওয়ার সময় থাকবে না। এ ক্ষেত্রে ভবনে টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া উচিত। কাঁচের জিনিস থেকে দূরে থাকতে হবে। সম্ভব হলে মাথায় বালিশ, হেলমেট বা নরম কিছু রাখতে হবে।
বহুতল ভবনে আশ্রয় নেবার সময় একসাথে এক স্থানে অনেকে আশ্রয় না নিয়ে ছড়িয়ে আশ্রয় নেয়া উচিত । এছাড়াও, ভবনের ভিতরে আশ্রয় নেওয়ার সময়, ভবনের পিলার বা ভিত্তির নীচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ ভবনটি ধসে পড়লেও ভবনের ভিত্তি এত সহজে ধসে পড়ে না। গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে দূরে থাকা উচিত। ভূমিকম্প হলে দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। মোবাইল ফোন কাছাকাছি রাখতে হবে এবং ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবার নম্বর আগে থেকেই সংরক্ষণ করে রাখতে হবে হবে।
ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। উপরের তলা থেকে জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দিবেন না। কারণ ভবনটি ধসে না পড়লেও আপনি গুরুতর আহত বা নিহত হতে পারেন।
ভূমিকম্প হয়ে গেলেও সতর্ক থাকুন। যেহেতু ভূমিকম্প প্রায়ই অবিলম্বে শেষ হয় না, তাই একটি বড় ভূমিকম্পের পরে বেশ কয়েকটি আফটারশক হয়। ভূমিকম্পের পরও সম্ভাব্য সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি সুশৃঙ্খলভাবে বের হবেন । সম্ভব হলে, উদ্ধারকাজে নেমে পড়তে হবে।
ভূমিকম্পের পুর্বাভাস সম্পর্কে সতর্ক থাকা!
একবার ভূমিকম্প হলে এক ঘণ্টার মধ্যে আবার ঘটতে পারে। এটা অনুমানযোগ্য,কিন্তু প্রথম কম্পনটি অনুমান করা যায় না । ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি এখনও তৈরি হয়নি। অনেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার দাবি করে, কিন্তু তাদের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) তার ওয়েবসাইটে বলেছে যে কোনোটিই পূর্বাভাসই সঠিক ছিল না। ক্যালটেক তার ওয়েবসাইটেও এটি বলেছে।
তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভাবনা যাচাই করা সম্ভব। যেহেতু ভূমিকম্প সাধারণত বিভিন্ন ফল্ট লাইন বরাবর হয়, তাই ভূমিকম্প হতে পারে এমন স্থানগুলি চিহ্নিত করা সম্ভব। বিভিন্ন ফল্ট লাইনে ভূমিকম্পের ইতিহাস বিবেচনা করে অনুমান করা যায় কত বছরের শক্তি ঐ স্থানে সঞ্চিত ছিল। তবে কখন এবং কীভাবে এই শক্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে বের হবে তা বলা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত শক্তি ছোট ভূমিকম্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নির্গত হতে পারে বা হঠাৎ করে একটি বড় ভূমিকম্প সংগঠিত হতে পারে। কিন্তু তা কবে হবে তা জানার জন্য এখনো কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি। বিজ্ঞানীরা এখনও এই বিষয়ে গবেষণা করছেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে পশু এবং পাখি আগে থেকেই ভূমিকম্প অনুধাবন করতে পারে, যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন যে কীভাবে প্রাণী এবং পাখিরা বুঝতে পারে এবং ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ
ফেসবুকে ব্যবসা করার কমপ্লিট গাইডলাইন !