ইন্টারনেট থেকে আয়! অনেকের কাছে এটি একটি অদ্ভুত শব্দ, অনেকের কাছে আবার একটি পরিচিত শব্দ। অনেকে খুজেই চলেছেন কিভাবে কি? আবার অনেকে বেশি আয়ের লোভে ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার এমনকি কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ধরা খেয়েছে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা কি কখনো জেনেছেন? এটা কী, কী করা দরকার, কীভাবে করা উচিত? আজকের আর্টিকেলটি মুলত এই বিষয়ে ।
যেহেতু পৃথিবী দিন দিন ইন্টারনেটমূখী হচ্ছে তাই এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।এটি করার জন্য আপনাকে সুপার হিউম্যান বা সুপারজিনিয়াস হতে হবে না, কারণ সঠিক নির্দেশিকা নিয়ে অনেক সাধারণ ছেলেমেয়েরাও ইন্টারনেটে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। আমাদের সরকার এ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছে এবং পেপার পত্রিকা, এফ.এম. রেডিও বা বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রামেও আপনারা ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে হয়ত শুনে থাকবেন।
কাজ শেখার জন্য কোন স্টেপ গুলো ফলো করবেন?
- প্রথমেই জানতে হবে ইন্টারনেটে কী ধরনের কাজ বা কাজ করা যায়
- এই বিষয়গুলো নিয়ে কয়েকদিন ভাবুন
- দেখুন এবং ভাবুন, কোন বিষয়টি আপনার জন্য ভাল হবে বা আপনার পরিস্থিতির সাথে যায়
- সাবধানে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করুন যা আপনি ভালভাবে শিখতে পারবেন
- সেই বিষয়ে গবেষণা শুরু করুন, প্রাথমিক ধারনা নিন
- প্রয়োজনে, বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সংগ্রহ করুন এবং সেগুলো অধ্যয়ন করুন। প্রয়োজনে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে কোর্স শুরু করুন।
- দুই থেকে তিন মাস পরিশ্রম করুন এবং ভালোভাবে কাজ করতে শেখার পর অনেক অনুশীলন করুন।
- ৪-৫ টি প্রজেক্ট নিজে সম্পূর্ণ করুন বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রথমের দিকে ফ্রীতে কাজ করুন
- এবার আপনি নিজেকে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কাজ করার উপযোগী মনে করতে পারেন
ইন্টারনেটে সাধারণত কোন কোন বিষয়ে কাজ পাওয়া যায়?
- এসইও – সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান
- ডিজিটাল মার্কেটিং – SEM, SMM
- ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট
- গ্রাফিক ডিজাইন (লোগো ডিজাইন, অ্যানিমেশন – 2D, 3D)
- অ্যাপ্লিকেশন/সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- কাস্টমার সাপোর্ট/কল সেন্টার
- ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইত্যাদি
উপরে কিছু সাধারণ কাজের একটি তালিকা রয়েছে যা অনলাইনে করতে পারবেন। গুলোর বাইরে অনেক রকমের কাজ পাওয়া যায়, তবে এগুলোই সবচেয়ে কমন।
আপনার জন্য প্রথমে কোনটা শেখা উচিত?
আপনি যদি এই প্রশ্নটি কোনও বড় ভাইকে করেন তবে তিনি বেশিরভাগ সময় আপনাকে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন বা তার পছন্দের কিছু সম্পর্কে বলবেন। কিন্তু আমার মতামত হচ্ছে আপনি আগে কাজগুলো সম্পর্কে জানুন বুঝুন তারপর আপনার যা ভাল লাগে সেটাতে ফোকাস করুন।
সাধারণভাবে, যে কাজগুলি শেখা কঠিন সেগুলি আরও ব্যয়বহুল এবং কম প্রতিযোগিতামূলক, আবার যে কাজগুলি শেখা সহজ এবং কম ব্যয়বহুল সেগুলোতে বেশি প্রতিযোগিতা।
যেমনঃ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইন্টারনেটের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজগুলির মধ্যে একটি। এখন যেহেতু এখানে অনেক টাকা আছে সেহেতু আপনি বসে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন যে আপনি অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট শিখবেন। কিন্তু এমনটা হওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ এখানে টাকা থাকলেও এটি আপনাকে কতটা সময় শিখতে হবে এবং আপনার হাতে কতটা সময় আছে? এটি আপনার পরিস্থিতির জন্য উপযুক্ত কিনা সেদিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
আপনাকে আগে বুঝতে হবে আপনার আগ্রহ কিসে, কোনটি আপনার কাছে সহজ মনে হয়, আপনি কি করতে চান। আপনার নিজের চেয়ে অন্যের মতামতকে কখনই প্রাধান্য দেবেন না। সর্বদা মনে রাখবেন আপনি যদি কাজটি উপভোগ না করেন তবে আপনি কখনই ভাল কিছু করতে পারবেন না। এই জন্য প্রত্যেকের উচিত, কাজ শেখার পূর্বে কমপক্ষে, ১৫-৩০দিন সময় নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের কাজ সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করা, সেগুলো সম্পর্কে জানা, বোঝা এবং সবশেষে নিজেকে যেটার যোগ্য এবং যেটাতে আপনি নিজেকে আগ্রহী বোধ করেন সেটার দিকেই এগুনো। মনে রাখবেন, আপনি বড় ভাইদের কাছ থেকে শুধু সাজেশন নিবেন, সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আপনার নিজ বুদ্ধিতেই নিতে হবে।
বিভিন্ন বিষয়ের কাজ সম্পর্কে কোথায় জানবেন?
ইচ্ছা থাকলে উপায় হবে। আপনার যা দরকার তা হল রিসার্চ করার জন্য সময়। গুগল ব্যবহার করে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন কাজের বিস্তারিত তথ্য পেতে পারি। এছাড়াও, বাংলা বিভিন্ন ব্লগ রয়েছে যেখানে আমরা বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে সহজেই কাজের অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারি।
উদাহরণস্বরূপঃ আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনের কাজ সম্পর্কে জানতে চান তবে আপনি কী করবেন? প্রথমে, “what is web design” লিখে গুগলে সার্চ করুন। সেখানে এটি সম্পর্কে কিছু তথ্য পড়ুন। এরপরে, আপনি ” নতুনদের জন্য ওয়েব ডিজাইন শিখতে কত সময় লাগে” অনুসন্ধান করতে পারেন এবং এটি সম্পর্কে কিছু তথ্য পড়তে পারেন। এর তারপরে, আপনি আবার অনুসন্ধান করতে পারেন – “ওয়েব ডিজাইন শিখতে আমার যা জানা দরকার” বা “একজন ওয়েব ডিজাইনারের জন্য কাজের কি কি সুযোগ”। সেখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন সাইট বা ব্লগ থেকে পড়ে জেনে নিন কোন কাজ কেমন হবে। এখানে শুধুমাত্র প্রাথমিক বিষয় গুলো জানলেই চলবে।
পরিশেষে বলতে চাই,একই সাথে অনেকগুলো বিষয় বেছে নেবেন না। শুরুর দিকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নিন এবং তাতে কাজ করতে শিখুন এবং তা খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করুন। পরে, আপনি যদি আরও শিখতে চান, আপনি অন্য বিষয় শিখতে পারেন। এখানে আপনি প্রায়ই দেখতে পাবেন যে একটি বিষয় শেখার জন্য অন্য বিষয় শেখার প্রয়োজন হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং আপনার কাছে কতটা সময় আছে এবং টপিকটি সম্পূর্ণ করতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা বিবেচনা করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
কিভাবে ওয়েব ডিজাইনিং এ ক্যারিয়ার শুরু করবেন?