পড়ালেখায় মনোযোগী হবার সহজ কিছু উপায়

পড়ালেখায় মনোযোগী হবার সহজ কিছু উপায়

পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায়

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষেরই পড়াশোনা করতে মন চায় না। এখন আপনি বলবেন, তাহলে এত বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা অধ্যাপক কি করে হলো? আসলে তারা পড়াশোনা করেই এগুলো হয়েছে এবং তারা পড়াশোনায় তাদের মন বসিয়েছিল। সুতরাং, আপনিও যদি তাদের মত হতে চান তাহলে, আপনাকেও তাদের মত পড়াশোনায় মন বসাতে হবে।
পড়াশোনায় মন বসানোর কয়েকটি সহজ উপায় আছে। এগুলো অনুসরণ করলে, আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।

১. লক্ষ্য স্থির করা
আমাদের বেশিরভাগ মানুষের পড়ায় মন না বসার প্রধান কারণ কেন পড়ছি? এই বিষয়টা তাদের কাছে পরিষ্কার না। ধরুন, আপনি বাসা থেকে হাটতে বের হলেন, কিন্তু আপনি কেন হাঁটবেন বা হাঁটলে কি হবে আপনে জানেন না। তাহলে, খুব বড়জোর ২/ ৩ দিন হাটার পর আপনি আর হাঁটবেন না।

কারণ, আপনি জানেন না আপনি কেন হাঁটছেন। পড়াশোনাও ঠিক তদ্রূপ,আপনি কেন পড়ছেন পড়ালেখা করে আপনি কি হতে চান? এই লক্ষ্য আগে ঠিক করুন। উদ্দেশ্যহীন ভাবে যদি আপনি বল ছুড়েন সেই বল যেমন গোল পোস্টে ঢুকবে না, ঠিক উদ্দেশ্যহীন পড়ালেখায় মন বসবে না এটাই স্বাভাবিক।

২. টেবিলে বসার অভ্যাস করা
নোবেল বিজয়ী এক লেখক যখন তার লেখার জীবন শুরু করে, তখন তিনি টেবিলে ৬/৭ ঘণ্টা বসে থেকেও কোন লেখা লিখতে পারতেন না। কিন্তু, তিনি টেবিলে বসা বাদ দেন নি, তাই তিনি একসময় ঠিকিই লিখতে পেরেছিলেন। আপনারাও টেবিলে বসার অভ্যাস করুন, পড়ায় মন না বসুক তারপরও বসে থাকেন। এভাবে বসে থাকতে থাকতে এক সময় পড়ায় মন বসবে।

অনেকে বিছানায় কিংবা শুয়ে শুয়ে পড়েন, এটা একেবারে বাদ দিতে হবে এতে কিছুক্ষণ পড়ার পর ঘুমের ভাব আসে এবং পড়া ঐখানেই শেষ হয়ে যায়। তাই টেবিলে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। টেবিলে পড়তে বসায় সময় পড়ার সব জিনিস নিয়ে পড়তে বসবেন। পড়ার সময় মনে পড়ল, আরে আমি তো কলম নেয়নি বা খাতা নেয়নি এতে বারবার টেবিল থেকে উঠার দ্বারা পড়ায় মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে।

৩. রুটিন করে পড়া
রুটিন করে পড়া পড়াশোনায় মনোযোগিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বলে থাকেন একদিন পড়লে অন্য দিন আর পড়তে মন চায় না বা কি পড়ব তা ভেবে পান না। এর জন্য রুটিন করা একান্ত প্রয়োজন গবেষণায় দেখা গেছে, রুটিন-বিহীন মানুষ সফলতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। রুটিন ছাড়া পৃথিবীর কোন কিছুই হয় না যেমন, রুটিন মাফিক সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিক থেকে উঠে এবং পশ্চিমে অস্ত যায়। প্রতিদিন দিন হয় এবং দিন শেষে রাত নেমে আসে। সব যেখানে রুটিন মাফিক হচ্ছে আপনাকেও পড়াশোনা রুটিন করে করতে হবে।

এখন অনেকে জানতে চান রুটিন কিভাবে করব? তাদেরকে বলব আপনার যেভাবে সুবিধা হয়, আপনি আপনার মন মত আপনার রুটিন কে সাজান। অবশ্যই পড়ার মাঝে অল্প সময় বিরতি দিবেন। কারণ, মানুষের ব্রেইন ৪০ মিনিট এর বেশি মনোযোগ রাখতে পারে না। তাই, বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়লে পড়াটা খুব ভালো হয়।

৪. যখন মনোযোগ বসে তখন পড়া
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের আচার, আচরণ, মন একেক রকম। তাই যে সময় আপনার বেশি মনোযোগ থাকে আপনি সেই সময় পড়েন এতে কোন সমস্যা নাই। এখন যদি বলেন, আমার কোন সময়ই পড়ায় মন বসে না, তাহলে বলব, আপনি পড়ার জন্য গভীর রাত কিংবা সকালকে বেছে নিতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, নীরব নিস্তব্ধ অবস্থায় পড়ায় অধিক মনোযোগ থাকে।

৫. টার্গেট বা মিশন নিয়ে পড়া
আমরা সবাই গেমস খেলেছি তো দেখা গিয়েছে, যে গেমস গুলাতে লেভেল বা মিশন থাকে ওই গেমসগুলা খেলতে খুব মজা লাগে । ১ লেভেল থেকে অন্য লেভেলে, এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। কোন বিরক্তি আসে না। ঠিক পড়াশোনাকেও যদি আমি গেমস এর মত বানাতে পারি তাহলে, অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারব।

৬. ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা
ব্যায়াম বা খেলাধুলা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে খুব কার্যকর। সারাদিনে একটা সময় অনন্ত ১ ঘণ্টা ব্যায়াম অথবা খেলাধুলা করা এতে মাইন্ড প্রেস থাকে এবং পড়াশোনায় অধিক মনোযোগি হওয়া যায়। আর খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম এর জন্য আপনি বিকেলকে নির্ধারণ করতে পারেন। কারণ, বিকেল বেলা পড়াশোনা না করা উত্তম।

৭. পর্যাপ্ত ঘুম
অনেকে সারারাত জেগে Facebook চালিয়ে কিংবা Youtube এ ভিডিও দেখে কাটান এতে করে আপনার ঠিকমত ঘুম হয় না। ফলে আপনার ব্রেইন শান্ত হয় না আর এর প্রভাব আপনার পড়াশোনাও পরে। ফলে, আপনার পড়তে বিরক্ত লাগে। একজন স্বাভাবিক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।

ব্রেইনকে ঠাণ্ডা করতে রাতের ঘুম বেশি কার্যকর দিনের ঘুমের চাইতে। আপনার মাথা যদি ঠাণ্ডা না থাকে তাহলে আপনি কোন কাজই ঠিকভাবে করতে পারবেন না। অতএব পর্যাপ্ত ঘুম পড়াশোনায় মনোযোগ আনার অন্যতম উপায়।

৮. মাল্টি কাজ করা থেকে বিরত থাকা
কেউ যদি বলে আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এবং ব্যবসায়ী হতে চাই এই কথাটি যেমন হাস্যকর ঠিক তেমনি আমরা পড়তে বসলে একসাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা করি এতে কোনটাই ঠিকভাবে হয় না শুধু সময় নষ্ট হয়।আমরা অনেকই মোবাইল/কম্পিউটার/ টিভির সামনে পড়তে বসি এতে না হয় পড়া না হয় ঐগুলা দেখা।

তাই পড়ার সময় মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি একেবারে বন্ধ করে পড়তে বসেন বা যে জায়গায় এগুলা আছে সে জায়গা ত্যাগ করে অন্য জায়গায় পড়তে বসেন এতে পড়ার মনোযোগের পাশাপাশি পড়া তাড়াতাড়ি মুখস্থ হবে।

৯. খাবারের প্রতি সচেতন হন
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পেছনে খাবার দারুণ ভূমিকা রাখে। অনেকে ভাবতে পারেন দামি খাবার খেলে যেমন: ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খেলে মনে হয় বেশি মনোযোগ আসে। আসলে ধারনাটি একেবারেই ভুল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার সর্বদাই পরিত্যাগ করা উচিত। তাহলে কি খাবেন?
top 10 tips for study skills

 

ছোটবেলায় সবাই শুনেছেন, মিষ্টি খেলে ব্রেইন বাড়ে। আসলেই , মিষ্টি জাতীয় খাবার ব্রেইনকে সতেজ এবং সুস্থ রাখে তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারেন, আর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং সবুজ শাক- সবজি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। এতে আপনার শরীর সুস্থ ও মন ভালো থাকবে এবং পড়াশোনায় মন বসবে।

কিছু কৌশল যা বিজ্ঞানসন্মত তা নিম্নরূপঃ

কৌশল নাম্বার ১ঃ পড়তে বসার আগে হালকা ব্যায়াম করা

কৌশল নাম্বার ২ঃ বিষয়বস্তুর উপর আকর্ষণ সৃষ্টি করা

কৌশল নাম্বার ৩ঃ পড়ুন, সারসংক্ষেপ করুন এবং লিখে ফেলুন

কৌশল নাম্বার ৪ঃ পড়ার সময় বিভিন্ন রংয়ের মার্কার দিয়ে দাগিয়ে পড়া

কৌশল নাম্বার ৫ঃ পড়ার বিষয়টিকে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত করা


আরো পড়ুনঃ

হাতের লেখা সুন্দর করার উপায় কী?

বীজগণিতীয় সমীকরণ সমাধান করার কৌশল কী?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *