হাতের লেখা সুন্দর করার উপায় কী?
সুন্দর হাতের লেখা যেমন প্রতিভা এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়, তেমনি সুন্দর হাতের লেখার মাধ্যমে আপনি অন্যদের থেকে অনন্য হতে পারেন। সুন্দর সবকিছু আমাদের খুব আকর্ষণ করে। সুন্দর হাতের লেখাও এর ব্যতিক্রম নয়। আর কিভাবে বাংলা হাতের লেখা সুন্দর করা যায় তা নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল।
হাতের লেখা সুন্দর করার বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। আসুন দেখে নেই কি কি উপায়ে আপনি আপনার হাতের লেখা উন্নত করতে পারেন এবং দ্রুত লিখতে পারেন।
লেখার সঠিক সরঞ্জাম নির্বাচন করা
শিশুর জন্য একটি পেন্সিল রাবার এবং অন্যান্য ভাল মানের লেখার সরঞ্জাম নির্বাচন করা প্রয়োজন। আপনি প্রায়শই দেখতে পারেন যে পেন্সিল হাতে দাগ হয়ে যায় বা রাবার দিয়ে লেখা পরিষ্কারভাবে মুছে ফেলা যায় না। এই বিষয়গুলো শিশুদের লেখালেখিতে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
শিশুকে সাদা কাগজের পরিবর্তে একটি রেখাযুক্ত নোটবুক দেওয়াও হাতের লেখা উন্নত করার একটি কৌশল। এতে করে শিশুর কাছে বর্ণ লেখা এবং লাইন সোজা রাখা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। তবে লাইনগুলো যেন বেশি মোটা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথম দিকে বড় করে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।এতে ভুলগুলো সহজেই চোখে পড়বে এবং শিশুরা সহজেই সেগুলো সংশোধন করতে পারে।
দেহের অবস্থান ঠিক রাখা
লেখার সময় দেহের সঠিক অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লেখার সময়, একটি টেবিল চেয়ার ব্যবহার করুন এবং লেখার জায়গায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করুন। আপনার পিঠ সোজা রাখুন, পা মেঝেতে সমতল রাখুন। প্রায় দেখা যায় অনেকে খাতার পাশে হাত বাঁকা করে লেখে। এটা ঠিক না। আপনার হাত এবং কব্জি নমনীয় রাখুন এবং আপনার আঙ্গুল দিয়ে লিখুন।
সঠিকভাবে পেন্সিল/কলম ধরা
সুন্দর হাতের লেখা আয়ত্ত করার জন্য একটি পেন্সিল বা কলম ধরার কিছু নিয়ম রয়েছে। বুড়ো আঙুল, তর্জনী এবং মধ্যমা আঙুল দিয়ে ধরতে হবে। অনেকে কলমটি খুব শক্ত করে ধরেন বা খুব বেশি জোর দিয়ে লেখেন। এটি হাতের লেখা খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই কলম হালকাভাবে ধরতে শিখুন এবং কম শক্তি ব্যবহার করুন।
সঠিকভাবে অক্ষর লেখা
আপনি যদি সুন্দর হাতের লেখা চান, তাহলে অক্ষর লেখার সময় আপনাকে স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে লেখার চেষ্টা করা উচিত। মাত্রাগুলোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। দুটি বর্ণের মধ্যে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একটা অক্ষর যেন অন্য অক্ষরে লেগে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুটি শব্দের মধ্যে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আপনি যদি খুব বেশি জায়গা ছেড়ে দেন তবে এটি ভাল দেখাবে না এবং আপনি যদি খুব ঘন ঘন করে লেখেন তবে এটি হিজিবিজি দেখাবে।
বর্ণের আকৃতি ঠিক রাখাও জরুরি। একটি অক্ষর ছোট এবং আরেকটি বড় হলে হাতের লেখা সুন্দর হয় না। এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি লাইন যেন সমান্তরাল থাকে। এটি বাংলা হাতের লেখা সুন্দর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
অনেক শিশুর বাংলা হাতের লেখা তুলনামূলকভাবে খারাপ। বাচ্চাদের বাংলা বর্ণমালা শিখতে একটু সমস্যা হতে পারে কারণ এতে বক্রতা এবং বৈচিত্র্য থাকে। স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ, ডিগ্রী এবং মাত্রা ও অর্ধমাত্রা,বক্রতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে, আপনি ডটযুক্ত লাইনের উপর আপনার হাত ঘুরিয়ে অনুশীলন করতে পারেন।
একটি সুন্দর পরিবেশ শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন একটি সুন্দর পরিবেশ থাকে যা শেখার জন্য উত্সাহিত করে, তখন তারা ভুল করতে দ্বিধা করে না, তবে ভুল থেকে শিখে আরও দ্বিগুণ উত্সাহ নিয়ে এগিয়ে যায়। লেখালেখিতেও একই রকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভুল থাকলে, লেখা খারাপ হলে বা লেখা দ্রুত না হলে অযথা বকাবকি না করে উৎসাহ দিতে হবে। এতে শিশুর সাহস থাকবে এবং খুব দ্রুত শিখতে পারবে।
লেখা খারাপ হওয়ার অন্য কারণও থাকতে পারে। মনোযোগের অভাব, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি কারণে শিশুর লেখা খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানের ব্যবস্থা করাই হাতের লেখা উন্নত করার উপায়। কোনো অবস্থাতেই শিশুদের অবমাননা করা উচিত নয়।
সুন্দর হাতের লেখা একটি শিল্প। তাই হাতের লেখার উন্নতির কৌশল হিসেবে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। হাতের লেখার অভ্যাস করলে লেখা ভালো ও দ্রুত হয়।
আজকাল বাচ্চাদের লেখার প্রতি আগ্রহী করা তোলা তেমন কঠিন কাজ নয়। কারণ অনেক ধরণের ওয়ার্কশীট এবং লেখার অনুশীলনের সরঞ্জাম রয়েছে। প্রয়োজনে সুন্দর হাতের লেখা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ