কিভাবে ওয়েব ডিজাইনিং এ ক্যারিয়ার শুরু করবেন

কিভাবে ওয়েব ডিজাইনিং এ ক্যারিয়ার শুরু করবেন?

বর্তমানে বিশ্বে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে জানাটা দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফ্রিল্যান্সার হিসাবে অনলাইনে অর্থ উপার্জনের অন্যতম উপায় হল ওয়েব ডিজাইন। বাংলাদেশে অনেক অভিজ্ঞ ওয়েব ডিজাইনার আছেন যারা ঘরে বসেই মাসে লাখ টাকার বেশি আয় করেন। সুতরাং, আপনি যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থোপার্জন করতে চান, ওয়েব ডিজাইন হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।

সম্প্রতি, ইন্টারনেটে ব্যবসা খুব দ্রুত বাড়ছে, যা ১০ বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। আর সে কারণেই ওয়েব ডিজাইন দিয়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আশার কথা হলো ওয়েব ডিজাইনিং শেখার জন্য ইন্টারনেটে পর্যাপ্ত রিসোর্সও আছে যা আপনাকে ঘরে বসে একজন বিশেষজ্ঞ ওয়েব ডিজাইনার হতে সাহায্য করবে।

যাইহোক, এই আর্টিকেলে আমরা ওয়েব ডিজাইন কি এবং এর ভবিষ্যত কেমন হবে সেই সম্পর্কে জেনে নিব। ওয়েব ডিজাইনার হওয়ার জন্য আপনি কী শিখবেন, ওয়েব ডিজাইন শেখার পর কোথায় কাজ করবেন, ওয়েব ডিজাইন শিখতে কত দিন সময় লাগে, বাংলাদেশ থেকে ওয়েব ডিজাইন শেখার সবচেয়ে ভালো উপায় কী? এই আর্টিকেলে আমরা এই সব বিষয় গুলো জেনে নিব।

ওয়েব ডিজাইন কি?

বেশিরভাগ নতুন ডিজাইনার ওয়েব ডিজাইন কনসেপ্ট বুঝতে ভুল করেন। ইন্টারনেটে প্রদর্শিত সব ধরনের ওয়েবসাইট ডিজাইনই ওয়েব ডিজাইন। কোনো প্রোগ্রামিং জ্ঞান ছাড়াই ওয়েব ডিজাইন করা যায়। একটি পেশাদার ক্যারিয়ার গড়তে  আপনাকে আরও ইন্টারেক্টিভ ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হবে যেখানে ইউজার সরাসরি ইন্টারেক্ট করে।আর এর জন্য দরকার HTML, CSS, JavaScript এর মতো প্রোগ্রামিং অভিজ্ঞতা। আর

১। ফ্রন্টইন্ড ডেভলপার 

ফ্রন্ট-ইন্ডকে ক্লায়েন্ট সাইড হিসাবে বিবেচিত হয় এবং ব্যাক-ইন্ডকে সার্ভার সাইড হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে আপনি HTML, CSS, JavaScript শিখে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আরও স্পেশালাইজড ফিল্ডে আপনি এগিয়ে যাবেন। আপনি খুব সহজে বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক যেমন React or Bootstrap দিয়ে কাজ সেরে ফেলতে পারেন অথবা JavaScript or jQuery দিয়ে আরও গভীরে প্রবেশ করে ক্যারিয়ারকে আরও শক্ত পজিশনে নিয়ে যেতে পারবেন।

২। ব্যাকইন্ড ডেভলপার 

আগেই বলেছি  ব্যাক-ইন্ড  হল সার্ভার সাইড এবং একটি ওয়েবসাইট প্রদর্শন করার জন্য এর পিছনে করা সমস্ত কাজ হল ব্যাক-ইন্ড । একটি ওয়েবসাইট একটি সার্ভারে হোস্ট করা হয়। যখনই একজন ব্যবহারকারী নেভিগেট করে একটি নির্দিষ্ট বিভাগকে প্রশ্ন করে বা অনুরোধ করে, তখন তাকে ইনকামিং কমান্ড অনুসারে সার্ভার থেকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়। যেসব ওয়েব ডেভলপার ব্যাক-ইন্ড ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে তারা বিভিন্ন ধরণের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বা ফ্রেমওয়ার্ক যেমন PHP, Python (Django), Java, SQL ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে যাতে সার্ভার, এ্যাপলিকেশন এবং ডাটাবেজ একত্রে সঠিকভাবে কাজ করে।

কীভাবে ওয়েব ডিজাইন শিখবেন?

যখন নতুন কেউ ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চান, তখন তারা হয়তো জানেন না তাদের কী কী দক্ষতা প্রয়োজন বা তাদের কী কী বিষয়ে শিখতে হবে। এই অংশে আমরা কথা বলবো একজন নতুন ডিজাইনারের কি কি দক্ষতা অর্জন করা উচিত।

১।  ডিজাইনের বেসিক নিয়মগুলি আয়ত্ত্ব করুন

সহজভাবে বলতে গেলে, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন হল রঙ, চিত্র, ফটোগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি, লেআউট, সাদা স্থান এবং এর মতো ভিজ্যুয়াল উপাদান এবং প্রভাবগুলির মাধ্যমে একটি ওয়েব/অ্যাপের UI এবং UX উন্নত করার প্রক্রিয়া। UI ডিজাইনের বিপরীতে, এটি ওয়েব/অ্যাপ ডিজাইনের ভিজ্যুয়াল এফেক্টের উপর আরো বেশি ফোকাস করে এবং ব্যবহারকারীদের ইন্টারেক্ট করে। নতুনদের হিসাবে, আপনি যদি একটি দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল ডিজাইন পেতে চান, তবে আপনাকে scale, visual hierarchy, balance, এবং contrast এর প্রাথমিক নীতিগুলি মাথায় রাখতে হবে, যা আপনাকে এনগেজমেন্ট এবং ইউজাবিলিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।

২। লেআউট ডিজাইন শিখুন 

লেআউট ডিজাইন হল একটি পেজের ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলিকে সাজানোর প্রক্রিয়া – যেমন টেক্সট, ছবি এবং সেপ। ওয়েবসাইট ডিজাইনে লেআউট ডিজাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ পেজের গ্রাফিক উপাদানগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারে যাতে পার্ফমেন্স বৃদ্ধি পায় এবং মেসেজ উপস্থাপন করতে পারে।

৩। কালার প্রিন্সিপাল শিখুন 

একটি ওয়েবপেজে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ দর্শকদের একটি ভিন্ন ভিন্ন কালার বা ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা প্রদান করে। তাই ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য এটি ওয়েবসাইট ডিজাইনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সুতরাং কালার প্রিন্সিপাল শিখুন, যা আপনার ওয়েবসাইটের ইফেক্টিভ কালার স্কিম তৈরি করতে পারে।

৪। ইন্টারঅ্যাকশন ডিজাইনে বেসিক দক্ষতা অর্জন করুন 

ইন্টারঅ্যাকশন ডিজাইন মানে আকর্ষণীয় ইন্টারফেস তৈরি করা। ওয়েব ডিজাইনারদের অবশ্যই ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনের প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে, যেমন: ডিজাইন স্ট্রাটেজি এবং প্রোটোটাইপ ইন্টারঅ্যাকশন তৈরি করা, যা আপনাকে আপনার ভিজিটরদের ইউজার-ফ্রেন্ডলি অভিজ্ঞতা দিবে।

৫। প্রোটোটাইপিং এবং ডিজাইন টুলের ব্যবহার শিখুন 

একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে অসংখ্য প্রোটোটাইপিং এবং ডিজাইন টুলের প্রয়োজন হয়। নতুন হিসেবে, আপনাকে Figma/InVisionStudio এর মতো একটি বেছে নিতে হবে যা ব্যবহার করা সহজ এবং আপনাকে দ্রুত আপনার ভবিষ্যত ওয়েবসাইটের প্রথম ভিজ্যুয়াল ইম্প্রেশন পেতে সাহায্য করবে। ফিগমার মাধ্যমে মিনিটের মধ্যে আপনার আইডিয়াগুলি ভেলিডেট করতে পারবেন।

৬। বেসিক কোডিং শিখুন 

একজন ডিজাইনার হিসেবে,এইচটিএমএল, সিএসএস এবং জাভাস্ক্রিপ্টের মতো মৌলিক প্রোগ্রামিং দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে । নতুনদের কোডিং শেখার ক্ষেত্রে সময় দিতে হবে। তাহলে আপনি একজন ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে ভাল করবেন।

৭। নেটওয়ার্কিং শিখুন 

আপনি একজন শিক্ষানবিস ডিজাইনার হিসাবে আপনার ক্যারিয়ার উন্নত করতে বা আপনার ওয়েব প্রোডাক্ট বিক্রি করতে গ্রাহকদের কাছে কীভাবে আপনার দক্ষতা বা ওয়েব পণ্যগুলিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করবেন তা আপনাকে শিখতে হবে। এজন্য একজন ডিজাইনারের জন্য শেষ কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতা হল নেটওয়ার্কিং দক্ষতা এবং এমনভাবে ডিজাইন উপস্থাপন করতে পারা যা আপনার গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করে।

ওয়েব ডিজাইনের পাঁচটি বেসিক এলিমেন্ট শিখুন

আপনি উপরের দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করার পরে, আপনার ওয়েব ডিজাইন শুরু করার সময় এসেছে৷ এখানে পাঁচটি বেসিক এলিমেন্ট নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনাকে সঠিকভাবে শিখতে হবে।

১। অভারঅল লেআউট

আপনার ওয়েবসাইটের অভারঅল লুক ওয়েব ডিজাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ব্যবহারকারীরা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্যবসার মতামত তৈরি করতে মাত্র ৫০ মিলিসেকেন্ড সময় নেয় এবং তারপরেই তারা নির্ধারণ করে তারা থাকবে নাকি চলে যাবে। তাই ডিজাইনকে simple, clean এবং accessible রাখতে হবে এবং একই সময়ে ডিজাইন সংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল রাখতে গ্রিড-ভিত্তিক ডিজাইন ব্যবহার করতে হবে, এইভাবে একটি আকর্ষনীয় overall layout তৈরি করতে হবে৷

২।কালার স্কিম 

আপনার সাইটের কালার প্যালেট এবং ফন্ট সরাসরি আপনার সাইট সম্পর্কে ইউজারের মতামত জানাবে এবং বেশিরভাগ নতুন ডিজাইনাররা যা দিয়ে শুরু করেন। ভাবছেন কি কালার স্কিম বেছে নেবেন? শুধু আপনার ব্র্যান্ড বা ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকান — আপনার ইউজার সম্পর্কে জানুন — তাহলেই আপনার কাজের চাপ বেঁচে যাবে এবং কালার স্কিম বাছাই করতে সহায়তা করবে।

৩।  টাইপোগ্রাফি

টাইপোগ্রাফি বা ফন্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার লেখাকে সহজে পঠনযোগ্য করতে হবে, যা সাধারণত কমপক্ষে ১৬ পিক্সেল হওয়া উচিত। হেডিং এর জন্য একটি পরিপূরক ফন্ট ব্যবহার করা ভালো, তবে তিনটি টাইপফেস বা অপ্রয়োজনীয় সাইজ ব্যবহার করা যাবে না। এভাবে আপনার মতো করে ক্রিয়েটিভিটির সাথে শিখতে থাকুন।

৪। নেভিগেশন

ব্যবহারকারীরা কীভাবে আপনার সাইট বা পণ্যগুলির সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং ব্যবহার করে তাতে নেভিগেশন একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। নেভিগেশন ডিজাইন হল ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ব্যবহারকারীদের নেভিগেট করার উপায় তৈরি, বিশ্লেষণ এবং প্রয়োগ করার শৃঙ্খলা। আপনার সাইটে সঠিক জায়গায় আপনার নেভিগেশনাল উপাদান ব্যবহার করতে কিছু সময় নিন। আর এজন্য আপনাকে এ অংশে বেশ টাইম দিতে হবে।

৫। কন্টেন্ট

আপনি লেআউট, কালার স্কিম, টাইপফেস এবং নেভিগেশন ডিজাইন শেখার পরে, এখন আপনাকে আপনার সাইটে বিষয়বস্তু যোগ করা শিখতে হবে। কন্টেন্ট একটি ব্রান্ডকে বিশ্বস্ত এবং শীর্ষস্থানীয় স্থান ধরে রাখতে সহায়তা করে৷ তবে অপ্রয়োজনীয় শব্দ আপনার ব্র্যান্ডের প্রাথমিক পয়েন্টগুলি নিস্তেজ করে দিতে পারে। তাই আপনার বিষয়বস্তু সংগঠিত এবং তথ্যপূর্ণ করতে শুধু ছোট এবং ছোট লেআউটে আকর্ষণীয় লিড জেনারেটিং শব্দ ব্যবহার করুন।

পরিশেষে বলতে চাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাসায় বসে সহজে ইনকাম করার এর থেকে ভালো সুযোগ মনে হয় আর নাই। সুতরাং লেগে থাকুন একদিন সফল হবেনই।


আরো পড়ুনঃ

ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার  উপায়!

কিভাবে ইউটিউবে ভিউ বাড়াবেন?

ওয়ার্ডপ্রেস থিম ব্যাকআপ নেওয়ার সহজ উপায় কী?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *