কিভাবে বিসিএস প্রস্তুতি নিবেন?
বিসিএস প্রিলি পাশ করা কি সত্যিই কঠিন? আসলে বিসিএস প্রিলি পাস করা সহজও নয় খুব কঠিনও নয়। বিসিএস প্রস্তুতিতে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে, হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শীর্ষে উঠে আসা সম্ভব। বিসিএস প্রিলি পাস করার জন্য পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিসিএসে দুই ধরনের প্রার্থী থাকে, তাই দুই ধরনের পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি দুইভাবে করতে হবে। যেমনঃ সব রোগের জন্য শুধু নাপা খেলে হয় না, ঠিক তেমনি সবার প্রস্তুতি কৌশল এক হলে এটি কাজে নাও আসতে পারে।
- এক ধরনের বিসিএস প্রার্থী হলেন নতুন (যেপ্রথমবার বিসিএস নিতে যাচ্ছেন)।
- অন্য আর এক ধরনের প্রার্থী আছে যারা আগে বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। অর্থাৎ, কিছুটা অভিজ্ঞ।
এখন যারা একেবারে নতুন তারা প্রথমে মানে আগে বিসিএস পরীক্ষা দেয় নি; তারা কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন? যারা প্রথমবারের মতো বিসিএস দেবেন তারা ঠিক বুঝতে পারছেন না কোথায় এবং কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন। আপনি হয়তো এটাও ভাবতে শুরু করেছেন যে আমি আগে বেশি পড়িনি, এখন কি আরও ভাল করা সম্ভব?
প্রকৃতপক্ষে, হাতে যে সময় আছে, সেই অনুযায়ী আপনি যদি ভালোভাবে পরিকল্পনা করেন তবে এখনও ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে শূন্য থেকে প্রস্তুতি শুরু করবেন।
ধাপ–১: প্রথমে বিসিএস প্রিলি সিলেবাস ভালোভাবে দেখুন এবং আগের বছরের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করুন। ফলে বিসিএসে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয় সে সম্পর্কে আপনি ধারণা পাবেন এবংবিগত সালের প্রশ্ন থেকে অনেক কমনও পাবেন পরীক্ষায় প্রশ্ন রিপিট হলে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। আপনার কাছে বেশি সময় না থাকলে ব্যাখ্যাসহ ৩৫তম থেকে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি রাউন্ড পড়ুন। কারণ এগুলো বিসিএস প্রিলির নতুন পাঠ্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আপনি প্রফেসরের বিসিএস প্রশ্নব্যাঙ্ক, ওরাকল প্রিলি প্রশ্ন ব্যাঙ্ক বা অ্যাসুরেন্স প্রিলি প্রশ্ন ব্যাঙ্কে এই বিষয়ে পড়তে পারেন। কারো কাছে যদি জব সল্যুশন থাকে, তারা সেখানে পড়তে পারেন।
ধাপ–২: তারপর A থেকে Z পর্যন্ত “বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস” বইটি অন্তত দুবার পড়ুন। বইটি পড়ার পর আপনি বিসিএস প্রিলি সম্পর্কে পুরোপুরি ক্লিয়ার হবেন। বিসিএস প্রিলি নিয়ে আপনার যে ভয় ছিল তা দূর হয়ে যাবে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
ধাপ–৩: তারপর প্রিলির বিষয়-নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুসারে বাজারে একটি ভাল পরিসরে বিষয়গুলি পড়ুন (যেমন MP3/প্রফেসর/অ্যাসুরেন্স/ওরাকল)। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা অধ্যায় হাইলাইট করুন। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো বা অধ্যায়গুলো নিয়ে প্রায় সবসময়ই প্রশ্ন থাকে। মনে রাখবেন যে কোনো বিসিএসে প্রিলিতে কিন্তু সিলেবাসের সব বিষয় বা অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে না। নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল এবং পরিবেশ বইটি দেখুন। এই বইটিতে প্রিলির ভূগোল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
ধাপ–৪: যেহেতু বিগত বছরের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার অনেক প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি হয় তাই জব সল্যুশন পড়ুন। এখানে আপনি ব্যাখ্যা সহ পূর্ববর্তী বছরের নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন সমাধান পাবেন। এই ক্ষেত্রে, আপনি প্রফেসরের জব সলিউশন বা ওরাকল জব সলিউশন অনুসরণ করতে পারেন।
ধাপ–৫: তারপর, সময়ের সাথে সাথে, বাজার থেকে ভাল মানের বিসিএস মডেল টেস্ট একটি বা দুটি সংগ্রহ করুন (আপনি বিসিএস রিয়েল মডেল টেস্ট বই এবং যে কোনও ভাল মানের মডেল টেস্ট নিতে পারেন)এবং সময় ধরে পরীক্ষা দিন। তারপর দেখুন আপনি কোন বিষয়ে কম পান।যে সাবজেক্টে কম পাবেন, সেই টপিকটা ভালো করে শেষ করুন সেই টপিকের উপর জোর দেন।
এছাড়াও, ৪র্থ-দশম শ্রেণির গণিত পাঠ সম্পূর্ণ করুন এবং নবম-দশম শ্রেণির বই “ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলা ব্যাকরণ” আপনার কাছে রাখুন। প্রতিদিন একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস বা সুযোগ নেই তাদের জন্য মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। পরীক্ষার আগে আপনি বর্তমান সাধারণ জ্ঞানের উপর একটি বই পড়তে পারেন।
মনে রাখতে হবে বিসিএস পরীক্ষায় এখন অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিযোগী রয়েছে। যেহেতু প্রতিযোগিতা অনেক বেশি তাই সফল হতে হলে অবশ্যই ব্যতিক্রমীভাবে শিখতে হবে এবং কার্যকর কৌশল ব্যবহার করতে হবে।
আরেকটা কথা মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ দেয় না, আপনাকে দক্ষতা এবং পরিশ্রম দিয়ে নিজেকেই সুযোগ করে নিতে হবে। আপনার এক ঘণ্টা বেশি পরিশ্রমী করার অর্থ হল আপনি সাফল্যের পথে এক ঘন্টা এগিয়ে আছেন। সকল পরিশ্রমী, সৎ এবং সাহসী মানুষের জন্য রইল শুভ কামনা ও দোয়া।
আরো পড়ুনঃ