কীভাবে ভালো প্রেজেন্টেশন দেবেন?
কিভাবে একটি ভাল প্রেজেন্টেশন দিবেন তা নিয়ে ছাত্র থেকে শুরু করে পেশাজীবী প্রায় সবাই অনেক কনফিউজে থাকেন। অন্যান্য দক্ষতার মতো, ভাল প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ক্ষমতাও রাতারাতি অর্জন করা যায় না। এটা নিয়মিত অনুশীলনের বিষয়।
বিষয় ও পরিবেশের ভিত্তিতে একেক জনের প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় শ্রোতাও ভিন্ন হয়। যে কারণে প্রেজেন্টেশনের বিষয় ও উপস্থাপনা বদলে যায়।
কীভাবে একটি ভাল প্রেজেন্টেশন দেওয়া যায় তা নিয়ে আজ আমরা কিছু খুব সাধারণ নিয়ম তুলে ধরব।আজকের আর্টিকেলটি মনযোগসহকারে পড়লে কীভাবে একটি ভাল প্রেজেন্টেশন দিতে হয় তা আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
১. প্রেক্ষাপট বুঝুন
ধরুন আপনি একজন গবেষক বা ছাত্র। অ্যাকাডেমিক কোন আলোচনায় প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে, আপনার উপস্থাপনার প্রতিটি স্লাইড সংখ্যা, কন্টেন্ট, ম্যাগাজিনের রেফারেন্স এবং গ্রাফ দিয়ে পূর্ণ হতে পারে। আপনার শ্রোতাদের কাছেও তা প্রত্যাশিত।
এখন শ্রোতা হিসাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোক বা নীতি নির্ধারক বা কোম্পানির প্রতিনিধিদের কল্পনা করুন। তাহলে একই প্রেজেন্টেশন আর গ্রহণযোগ্য হবে না। আপনার দর্শকদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে আপনার বিভিন্ন স্লাইড তৈরি করতে হবে।
২. এক স্লাইডে একটা পয়েন্ট
আপনি যেকোন একটি বিষয়ে হয়তো মোট ১০টি পয়েন্ট করে কভার করবেন। আপনি একটি স্লাইডে দুটি পয়েন্ট সম্পর্কে কথা বললে আপনি দ্রুত দর্শকদের আগ্রহ হারাবেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে এবং পয়েন্টটি যতটা সম্ভব পরিষ্কারভাবে বোঝাতে আপনি একটি পয়েন্টের জন্য দুই বা তিনটি স্লাইডের যেতে পারেন। কিন্তু তা দুটি জিনিসের উপর নির্ভর করে:
- প্রেজেন্টেশনের জন্য বরাদ্দ সময়
- আপনার শ্রোতাদের জন্য তথ্য কতটা প্রাসঙ্গিক
৩. স্লাইড আপনার প্রেজেন্টেশনের সহযোগী মাত্র
প্রেজেন্টেশনের সময় দর্শকরা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। স্লাইডগুলি পড়ার জন্য তাদে কাছে খুব সময় থাকে না।একটি বড় এবং স্পষ্ট শিরোনাম, সীমিত সংখ্যক শব্দ, একটি প্রাসঙ্গিক চিত্র – এটি প্রতিটি স্লাইডের মূল কাঠামো হতে পারে।
একটা স্লাইডের জন্য ১-২ মিনিট বরাদ্দ রাখা বাঞ্ছনীয়। যদি একটি ১০-মিনিটের প্রেজেন্টেশনের ১০টি স্লাইড থাকে তবে কোনো স্লাইড ১ মিনিটের বেশি সময় পায় না৷ তাই আপনি যদি জটিল গ্রাফ বা অনেক শব্দ লেখেন তাহলে আপনি দর্শকদের মনোযোগ হারাতে পারেন।
৪. লম্বা প্রেজেন্টেশনের সময় শ্রোতাদের মানসিক বিরতি দিন
টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের গড় মনোযোগ ধরে রাখার সময়কাল ২০ মিনিটের বেশি নয়। তাই যথাসম্ভব কম সময়ে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রেজেন্টেশনের সময় বেশি হলে কী করবেন? বিরতি নিন অবশ্যই ঘোষণার মাধ্যমে নয়। এটি বিরতি গল্পের সাথে । তাতেই প্রশ্ন ফাটল। কন্টেন্ট এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে গল্প করুন শ্রোতাদের সাথে। প্রশ্নও নিতে পারেন এবং সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন।
অ্যাপল কম্পিউটারের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস সবসময় তার দীর্ঘ উপস্থাপনায় একটি ফাঁকা স্লাইড অন্তর্ভুক্ত করতেন। লক্ষ্য একটাই দর্শকদের মানসিক বিরতি দেওয়া।
৫. ফন্ট সাইজ গুরুত্বপূর্ণ
শ্রোতা বড় হলে, ফন্টের সাইজ ১৮ পয়েন্ট বা তার বেশি রাখুন। তরুণ শ্রোতাদের জন্য ফন্টের সাইজ ন্যূনতম ১৪ বা তার বেশি রাখার চেষ্টা করুন। ফন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বিধা দেখা দিলে সন্স শেরিফ (sans-serif) ক্যাটাগরির ফন্ট বেছে নিন। যেমন, হেলভেটিকা (Helvetica) বা অ্যারিয়েল (Arial)।
সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো ফন্টগুলি প্রায়শই প্রেজেন্টেশনে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য কম আলোর পরিবেশ প্রয়োজন। আপনি গাঢ় ব্যাকগ্রাউন্ডে হাল্কা রংয়ের ফন্ট ব্যবহার করে এই পরিস্থিতি এড়াতে পারেন।
মূল বিষয় হল স্ক্রিনের লেখা পড়া সহজ করা। কটকটে ব্যাকগ্রাউন্ড বা অদ্ভুত ফন্ট সহ লোকেদের বিরক্ত করবেন না।
৬. দর্শক বা শ্রোতাদের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন
অনেকের স্লাইড দেখে পড়ার অভ্যাস আছে। এই অভ্যাস এড়িয়ে চলুন। কিন্তু স্লাইডের সাথে বক্তৃতা মেলে কিনা তা দেখতে আপনি স্লাইডের দিকে নজর দিতে পারেন।
৭. নিজেকে নিজের দর্শক বা শ্রোতার জায়গায় বসান
একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করার সময়, দর্শকদের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার উপস্থাপনাটির দুর্বলতাগুলি কী হতে পারে তা বিবেচনা করুন। একা একা প্রেজেন্টেশন দিয়ে দেখুন। প্রয়োজনে বন্ধু বা পরিচিতের সঙ্গে বসে অনুশীলন করুন। এটি প্রাথমিক জড়তা দূর করে এবং বরাদ্দ সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ