মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে বাচার উপায় কী

মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে বাচার উপায় কী?

মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে বাচার উপায় কী?

পড়াশোনা বা বিশেষ কাজের মধ্যে বিরতির সময় আপনি আপনার স্মার্টফোনটি হাতে নিলেন এবং তারপরে কতটা সময় কেটে গেছে আপনি নিজেও জানেন না। স্মার্টফোন আসক্তি মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। শুধু বড়দের নয়, শিশু ও তরুণদের অভ্যাসে গেঁথে গেছে এই আসক্তি।

সেল ফোন আসক্তি দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন মানসিক সমস্যার পাশাপাশি অতিরিক্ত মুঠোফোন ব্যবহার নানা বিপর্যয় ডেকে আনে। স্মার্টফোন আসক্তি মোকাবেলায় মোবাইল অ্যাপের একটি পরিসর তৈরি করা হয়েছে। কিছু অ্যাপ যেহেতু ফোনে সময় খেয়ে ফেলছে, তাই অন্যান্য অ্যাপও সময় বাঁচাতে পারে বলে মনে করছেন এসব অ্যাপ নির্মাতারা।

কিছু অ্যাপ ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে যদি স্মার্টফোনটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ব্যবহার করা হয়, তাহলে অন্য অ্যাপ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও, কিছু অ্যাপ নির্দিষ্ট সময়ের পরে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার ব্লক করে। অ্যাপ নির্মাতারা বলছেন, এভাবে ধীরে ধীরে মোবাইল ব্যবহারের সময় কমানো যেতে পারে।

অ্যাপব্লকার

মূলত, অ্যাপব্লকার নিজেই একটি অ্যাপ। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্যান্য অ্যাপগুলিকে ব্লক করতে পারে৷ আপনি যদি নির্দিষ্ট কাজের সময় চান তবে আপনি নির্দিষ্ট অ্যাপগুলিকে চিহ্নিত করে ব্লক করতে পারেন। এই ফিচারে ব্যবহারকারী অ্যাপ আনলক করার পর ব্লক করা অ্যাপের নোটিফিকেশন দেখতে পারবেন।

এখানে একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার অপশন রয়েছে। ফলস্বরূপ, অন্য কেউ সেটিংস পরিবর্তন করতে পারবেন না। এটির মাধ্যমে আপনি একটি দৈনিক সময়সীমা সেট করতে পারবেন। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে ফ্রীতে ডাউনলোড করা যাবে। রেটিং ৪.২ অ্যাপটি ইতিমধ্যে এক মিলিয়নেরও বেশি ডাউনলোড পেয়েছে।

ইওর আওয়ার

অনেকেই মনে করেন, স্মার্টফোন ছাড়া একদিনও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আপনার আসক্তির মাত্রা বেশি নাকি কম তা জানতে আপনি আপনার ফোনে ইয়োর আওয়ার অ্যাপটি ইনস্টল করতে পারেন।

অ্যাপটি ব্যবহারকারীর ফোন ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী আসক্তির মাত্রা সম্পর্কে অবহিত করে। তারপর আসক্তি কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করে। ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন ফোনে কতটা সময় ব্যয় করেন তার লক্ষ্য নির্ধারণ করে আসক্তি কমাতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যাপটির সাহায্যে ফোনের স্ক্রিন কতক্ষণ অন ছিল, কখন কোন অ্যাপ ব্যবহার করেছেন ইত্যাদি তথ্য টাইমলাইন আকারে পেয়ে যাবেন। এই অ্যাপটি ৪.৫ রেটিং সহ Google Play Store থেকে ডাউনলোড করা যাবে।

স্টে ফোকাস

স্মার্টফোন আসক্তির মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হল সামাজিক মিডিয়া দুর্বলতা। যারা মাঝে মাঝে ফেসবুক বা টুইটারে যান। এই অ্যাপটি তাদের আসক্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

এটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনি প্রতিদিন কতবার Facebook অ্যাপটি চালু করেছেন বা আপনি কতক্ষণ এটি চালাচ্ছেন। এ থেকে বোঝা যাবে কত সময় নষ্ট হচ্ছে।

আপনি ফোনে থাকা কোন অ্যাপ কতবার চালু করবেন তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। পরে, অ্যাপটি আপনাকে একটি নোটিফিকেশান এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে আপনি নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি অ্যাপটি ব্যবহার করতে চান।

এই অ্যাপে ব্যবহারকারীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন। রেটিং ৪.৫ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে।

যে জিনিসটার উপর আসক্তি থাকে আবার সেটার মাধ্যমে আসক্তি কাটিয়ে ওঠা কতটা সম্ভব তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে যেকোনো ধরনের আসক্তি কাটিয়ে ওঠার পথ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে একদিনে ধূমপানের মতো আসক্তি ছাড়তে পারে না, আবার অনেকে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়। ফলস্বরূপ, নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন যে নির্দিষ্ট অ্যাপগুলি প্রত্যেকের মোবাইল আসক্তির জন্য কার্যকর হবে।

তাহলে স্মার্টফোনের এই ভয়ানক আসক্তি দূর করার উপায় কী? বিজ্ঞানীরা এই স্মার্টফোন আসক্তিকে “নোমোফোবিয়া” বলেছেন। বিশেষজ্ঞরা এই নোমোফোবিয়া এড়াতে কিছু উপায়ের পরামর্শ দিয়েছেন।

ফোন ব্যবহারের সময় নির্ধারণ

স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা করুন। আপনি প্রতিদিন কতবার আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণ করুন। প্রথমত, আপনার স্মার্টফোনের দিকে দিনে ২০ বারের বেশি না দেখার সিদ্ধান্ত নিন। এছাড়াও, খাওয়ার সময় বা অন্যদের সাথে কথা বলার সময় আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না।

স্মার্টফোন নিয়ে বিছানায় নয়

ঘুমানোর আগে ফোন বন্ধ করে ঘুমাতে যান। ঘুমানোর সময় ফোন অফ করে রাখলে ক্ষতি নেই, তাই ফোন অফ করে রাখুন। ঘুম কম হওয়া বা অনিদ্রার অন্যতম কারণ স্মার্টফোন আসক্তি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য অনেকেই তাদের স্মার্টফোনে অ্যালার্ম সেট করেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ব্যবহারকারীরা ঘুম থেকে উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করে এবং ফোনের বিজ্ঞপ্তিগুলি পরীক্ষা করা শুরু করে৷ আতে অনেক সময় চলে যায়। এই ধরনের সমস্যা এড়াতে স্মার্টফোনে অ্যালার্মের পরিবর্তে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ

আপনার স্মার্টফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ডিলিট করে ফেলুন। ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলি স্মার্টফোনে দরকারী, তবে আপনি যদি আসক্তি কমাতে চান তবে আপনাকে এই অ্যাপগুলি ডিলিট করে ফেলতে হবে। স্মার্টফোনে আরও অনেক অ্যাপ রয়েছে যা সময় নষ্ট করে। এই ধরনের অ্যাপগুলি সরিয়ে দিলে আপনার মূল্যবান সময় বাঁচবে এবং ফোন স্টোরেজ ও চার্জ কম খরচ হবে।

আড্ডায় স্মার্টফোন পরিহার

পরিবার বা বন্ধুদের সাথে চ্যাট করার সময় অনেকেই স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে পারিবারিক বন্ধন হালকা হয়। তাই এসব পরিস্থিতিতে স্মার্টফোন এড়িয়ে চলাই ভালো।

মেডিটেশন

দিনে কমপক্ষে ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন বা অন্যান্য মেন্টাল রিল্যাক্সেশন ব্যায়ামের জন্য নিদ্ধারন করে রাখুন। এটি শুধুমাত্র মোবাইল আসক্তি নয়, যেকোনো ক্ষেত্রে আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি কার্যকর উপায়।


আরো পড়ুনঃ

মোবাইলের ডিলিট করা ছবি ফিরিয়ে আনার উপায় কী?

মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় কি?

কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখবেন?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *