নারীর প্রতি পুরুষের এবং পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণ সহজাত, আর এই সহজাত প্রবণতা জন্মলগ্ন থেকে মানুষের মধ্যে গেঁথে দেয়া হয়েছে। দেশ, সমাজ, সময় নির্বিশেষে এই প্রবণতা বহমান রয়েছে এবং থাকবে। তবে মূল বিষয় হলো নারীর প্রতি পুরুষের বা পুরুষের প্রতি নারীর এই আগ্রহ যেন হয় শালীন, শোভন, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং পরস্পরের প্রতি সম্মানজনক। তবে প্রতিনিয়তই এর ব্যত্যয় ঘটে চলেছে।
আমাদের চারপাশে বিস্তর অভিযোগ, বিশেষ করে পুরুষদের বিরুদ্ধে, যে তাঁরা নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বরং চারপাশে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং আরো অনেক ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব আমরা একেভারেই চাই না। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদির প্রসঙ্গ আসলেই অবধারিতভাবে নারীর পোষাকের প্রসঙ্গ চলে আসে। অনেকেই যুক্তি দেন যে খোলামেলা পোষাক নারীদের নির্যাতিত হবার আশংকা বাড়িয়ে দেয়। দেশ, সমাজ আর সময়ের প্রেক্ষিতে বলা যায় পোষাকের সাথে নারী নির্যাতনের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ খোলামেলা পোষাকের কারণে নির্যাতিত, লাঞ্চিত বা নিগৃহীত হবার সম্ভাবনা (আশংকা) বেড়ে যায়।
অনলাইনে বিভিন্ন দেশের অনেক কন্টেন্ট রয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে খোলামেলা পোষাক পড়া নারীদেরকে অন্যরা সহজেই টোন করছে বা অন্যায়ভাবে স্পর্শ করছে এবং একই সমাজে ঢিলেঢালা, শালীন বা হিজাব জাতীয় পোষাক পড়া নারীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ঘটছে।
নিচে দেশ, সমাজ বা কালভেদে নারীদের জন্য ঢিলেঢালা, শালীন বা হিজাব জাতীয় পোষাক পড়ার উপযোগিতা এবং উপকারিতা বর্ণনা করা হলোঃ
(১) আরামদায়ক: লম্বা পোশাক সাধারণত নরম, নিঃশ্বাস নেওয়া যায় এমন কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় যা সর্বোচ্চ আরাম দেয় এবং চলাচলে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি দেয়।
(২) সুরক্ষা দেয়: হিজাব মহিলাদের আবৃত করে যাতে তারা আমাদের আশেপাশের কিছু অসুস্থ পুরুষের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং মহিলাদেরকে তাদের ক্ষতিকর দৃষ্টি থেকে নিরাপদ রাখে। এটি সূর্যের ময়লা এবং ক্ষতিকারক রশ্মি এবং অন্য যে কোনও অপ্রত্যাশিত জিনিস যা নারীর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে তা থেকেও রক্ষা করে।
(৩) বৈচিত্র্যতার সাথে ব্যবহার করা যায়ঃ বড়, লম্বা পোশাকগুলি প্রয়োজনমাফিক উপরে বা নীচে পরা যেতে পারে, গুটিয়ে রাখা যেতে পারে। এরকম পোষাক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য নারীকে উপযুক্ত করে তোলে।
(৪) সম্মান বৃদ্ধি করেঃ সারা পৃথিবীতেই লম্বা পোষাক সম্মানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ধর্মীয় নেতা যেমন ইমাম, গুরু, পাদ্রী এবং নানরা লম্বা পোষাক পরিধান করেন। অন্যদিকে, বিচারক, ডাক্তার, আইনজীবী, বিয়ের বর, কনে – সবাই লম্বা পোষাক পরিধান করেন। এদের বিশেষ পোষাক তাঁদের সম্মানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সে কারণে লম্বা, ঢিলেঢালা পোষাক পড়া খোলামেলা পোষাক পড়ার চেয়ে অনেক বেশি সম্মানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের পোষাকের কথাও এখানে উল্লেখ করা যায়।
একজন শিক্ষার্থী তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান এবং কাঙ্খিত সনদটি গ্রহণ করার দিনে নিজেকে লম্বা পোষাক দ্বারা আবৃত করে থাকেন এবং একই সাথে সমাবর্তনের দিনটিতে কোন রকম খোলামেলা পোষাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকেন। শিক্ষকবৃন্দও এরকম বিশেষ দিনে লম্বা পোষাকই পরিধান করে থাকেন। পুরুষের মনে নারীর সৌন্দর্য দেখার যত বাসনাই থাকুক না কেনো সাধারণভাবে পুরুষরা লম্বা পোষাক পড়া নারীদেরকেই বেশি সম্মানের চোখে দেখেন।
অনেক পুরুষই আছেন যারা খোলামেলা পোষাক পরিহিতা নারীদের সাথে মজা করতে পছন্দ করলেও জীবনসংগী হিসেবে শালীন পোষাক পড়া নারীদেরকেই বেশি পছন্দ করে থাকেন। অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোন পুরুষ নিজের বান্ধবী বা গার্লফ্রেন্ডকে খোলামেলা পোষাকে দেখতে অভ্যস্ত হলেও নিজের বোন, স্ত্রী, মা বা মেয়েকে একইরকম খোলামেলা পোষাকে দেখতে পছন্দ করেন না। এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
(৫) আর্থিক এবং মানসিক শান্তির জন্য সহায়কঃ সারা দুনিয়াতেই অনেক নারী আছেন যারা প্রতিনয়ত অন্য নারীদের সাথে প্রতিযোগিতা বজায় রাখেন এবং প্রতিযোগী নারীদের চেয়ে ফ্যাশনেবল পোষাক পরিধান করার জন্য পোষাকের পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় করে থাকেন। সাধারণভাবেই এসব পোষাক খোলামেলা হয় এবং অনেক দামী হয়ে থাকে। এ বিষয়টি নারীদের মানসিক অশান্তিরও কারণ ঘটায়। এ রকম প্রতিযোগীতা অপ্রয়োজনীয়। ঢিলেঢালা, লম্বা, হিজাব জাতীয় পোষাক পরিধান করলে এই ধরনের আর্থিক এবং মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়। অন্যদিকে, খোলামেলা পোষাক পরিধান করলে নারীদেরকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয় যে শরীরের কোন অংশ অতিরিক্ত আলগা হয়ে যায় কি না বা কেউ বাজেভাবে নজর দিচ্ছে কি না। লম্বা পোষাকে এসব অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় না
(৬) আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করেঃ লম্বা হিজাব জাতীয় পোষাক পরিধানকারী নারীরা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজেদেরকে দামী এবং সম্মানী মনে করেন। এই মনে করার কারণে তাঁরা নিজেরা আত্নবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এই আত্নবিশ্বাস তাঁদেরকে নিজের কাজ ভালোভাবে করতে, সফল হতে এবং সমাজে নিজের জন্য গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।
(৭) সময় বাঁচায়: খোলামেলা ফ্যাশনের পোষাক পরিধান করার চেয়ে লম্বা, ঢিলেঢালা, হিজাব জাতীয় পোষাক পরিধান করতে সময় অনেক কম লাগে। এই বাড়তি সময় নারীরা এমন সব কাজে ব্যবহার করতে পারেন যাতে তাঁরা অন্যদিকে লাভবান হতে পারেন।
(৮) চিরকালের ফ্যাশন হিসেবে লম্বা পোষাকঃ আগেই বলেছি লম্বা পোষাক সম্মানের প্রতীক। একই সাথে লম্বা পোষাক নারীদের জন্য “চিরকালের জন্য আধুনিক ফ্যাশন” হিসেবেও সমাদৃত হয়ে আসছে। নারীরা সৌন্দর্য্যের প্রতীক আর এই সৌন্দর্য কোন সস্তা বিষয় নয় যা অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রদর্শিত হতে হবে। লম্বা পোষাক বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি নারীদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। আবার লম্বা পোষাক শরীরের অনেক অসাঞ্জস্যতা ঢেকে রাখতে সাহায্য করে। সে কারণেই লম্বা, ঢিলেঢালা, হিজাব জাতীয় পোষাক একদিকে যেমন ফ্যাশনের দিকে থেকে অন্যদিকে ব্যক্তিত্ব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেও সব সময়ের জন্য উপযোগীতা ধরে রেখেছে।