এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার চাকুরি হারানোর আশংকা থাকবে না

এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার চাকুরি হারানোর আশংকা থাকবে না

যেসকল টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনার চাকুরি হারানোর কোনো আশংকা থাকবে না

কলকাতার বিখ্যাত সংগীত শিল্পী অঞ্জন দত্তের একটা গান আছে, এটা কি টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন? দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রেমিক একটা চাকুরি পেয়েছে। চাকুরি পাবার খবর সে প্রেমিকাকে দ্রুত জানাতে চায়। পাবলিক টেলিফোন থেকে সে ফোন করেছে প্রেমিকার পাশের বাড়িতে। টেলিফোনের লাইন পাওয়া যায়নি, অথবা টেলিফোনের লাইন পেলেও অপর পাশে প্রেমিকা ফোন ধরার আগেই ব্যাকুল প্রেমিক তাঁর আবেগ ঢেলে দিচ্ছে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে টেলিফোনের স্পিকারের সামনে।

কত দীর্ঘ প্রতীক্ষার এই চাকুরি! আমাদের মতো দেশে সময়মতো চাকুরি না পাওয়ার কারণে কত প্রেম চোখের পানিতে ভেসে গেছে তাঁর ইয়ত্তা নেই। তবে একবার চাকুরি পেয়ে গেলেই যে সে চাকুরি সারাজীবন টিকে থাকবে এমন নিশ্চয়তা নেই। বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে বিভিন্ন কারণে চাকুরি চলে যাবার আশংকা থেকে যায়। তবে নিচের টিপসগুলো অবলম্বন করলে আপনার চাকুরি চলে যাবার আশংকা থাকবে না বলে ধরে নেয়া যায়।

(১) নিজের দায়িত্ব এবং সে দায়িত্ব মূল্যায়নের সূচক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুনঃ আপনি যে সংস্থায় কাজ করছেন সেই সংস্থায় আপনার আসল কাজগুলো বুঝে নিন এবং সেসব কাজের মূল্যায়নের যে ইন্ডিকেটরস বা সূচকগুলো আছে সেগুলো ভালোভাবে বুঝে নিন। পাশাপাশি সে সূচকগুলো যিনি মূল্যায়ন বা তদারকি করবেন, তাঁদের সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা রাখুন। হতে পারে আপনি সেলস এ আছেন। আপনার দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক বাঁ ত্রৈমাসিক টার্গেট দেয়া আছে। আপনি সে টার্গেট কতটুকু পূরণ করতে পারছেন তা সুপারভাইজার বা বসকে নিয়িমিত জানান। আপনি লক্ষ্যমাত্রার পেছনে আছেন নাকি অগ্রগামী আছেন তা নিয়মিত মূল্যায়ন করুন এবং বসকে অবহিত রাখুন। রিপোর্ট লেখা, মিটিং আয়োজন করা, ভিজিট করা ইত্যাদি যে কাজের জন্যই আপনি দায়িত্বশীল হোন না কেনো আপনার কাজের গতি এবং অবস্থা সম্পর্কে নিজে সচেতন থাকুন এবং বসকে অবহিত রাখুন। কৌশলগতভাবে বসের কাছে নিজের পারদর্শিতার বিষয়ে ফিডব্যাক চান।

(২) আপনার শক্তি এবং দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করুন: আপনার দক্ষতার ক্ষেত্র এবং আপনার উন্নতির প্রয়োজন এমন ক্ষেত্রগুলি নির্ধারণ করতে নিজস্ব মূল্যায়ন করুন। যে যে দক্ষতাগুলো বৃদ্ধি করা দরকার সেসব দিকে খুব সিরিয়াস থাকুন। নির্দিষ্ট সময় পরে অগ্রগতি মূল্যায়ন করুন। পাশাপাশি যে দিকে আপনার শক্তি রয়েছে অর্থাৎ যে দক্ষতাগুলো আপনি ভালোভাবে পারফর্ম করতে পারেন সেসব দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালিয়ে যান।

Professional Conduct 1

(৩) কর্মজীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: আপনি আপনার কর্মজীবনে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান তা নির্ধারণ করুন।পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক এবং সময়সীমাবদ্ধ (SMART – Specific, Measurable, Achievable, Relevant, and Time-bound) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনার আজকের অবস্থান আপনার বড় লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে ভূমিকা রাখছে তা যাচাই করুন এবং সে অনুযায়ী এগিয়ে যান।

(৪) নিজের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলুনঃ যে কোন কাজে বা অফিসের অনুষ্ঠানে নিজের উপস্থিতি এমনভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলুন যাতে আপনি যে আছেন তা যেনো সবাই বুঝতে পারে। কোন কারণে আপনি হাজির না থাকলে সেটাও যেনো বোঝা যায় অর্থাৎ সবাই যেনো আপনাকে মিস করে বা আপনাকে খোঁজ করে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করুন। এটা কীভাবে করা যায়?

  • প্রথমত, আপনি নিজের আগ্রহে সবার সাথে পরিচিত হবেন,
  • দ্বিতীয়ত, সবার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলবেন, বিনয়ের সাথে সবাইকে সালাম দেবেন। এটা করতে আপনার দ্বিধা লাগলেও এই বিনয়ী আচরণ আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে।
  • শেষ কথা হলো পারলে কাউকে উপকার করুন। মানুষ উপকার মনে রাখে। আর কারো বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা, কুৎসা বা নিন্দা করবেন না। অফিসের কাউকে নিয়ে কোন উপহাস বা কৌতুক করবেন না, বিশেষ করে বস বা সিনিয়র কোন কলিগকে বিন্দুমাত্র নিন্দা করবেন না। পারলে কৌশলে কলিগদের প্রশংসা করুন। কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকলে মুখোমুখি কথা বলে সমাধান করুন। এন্টারটেইনিং কোন বিষয়ে দক্ষতা থেকে থাকলে সেটার চর্চা করুন এবং পারফর্ম করুন।

(৫) সহযোগী এবং সমব্যথী হোনঃ কোন কলিগের কোন বিপদ হলে বা অফিসের কোন সমস্যা হলে সেটাকে সিরিয়াসলি অনুভব করুন, একাত্ন হোন, সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে সময় বা শ্রম দিয়ে বাড়তি সহযোগীতা করুন।

(৬) বিতর্কিত কাজ এড়িয়ে চলুনঃ অফিস কলিগদের সাথে আচরণে পেশাগত স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখুন। মনে রাখবেন কলিগরা সাধারণত বন্ধু হয় না। এটা বিশ্বাস করবেন এবং মেনে চলবেন। যাকে আপনি বিশ্বাস করবেন, সময়ে সে-ই আপনাকে আঘাত করবে। সুতরাং সুযোগ দেবেন না। আর কোন অফিস কলিগের প্রতি বাড়তি কোন আগ্রহ বা সম্পর্ক দেখাবেন না। আপনাকে নিয়ে যেনো কোনরকম কথা না ওঠে। এরকম কোন ব্যাপার নজরে পড়লে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিজেকে প্রফেশনালি বিতর্কমুক্ত রাখুন।

(৭) নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি করুনঃ আপনি যে অবস্থানে কাজ করছেন সেই অবস্থানের অন্য প্রতিষ্ঠানের কলিগদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন এবং নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করুন। তাঁদের সাথে কথা বলে নিজের শেখার এবং জানার পরিধি বৃদ্ধি করুন। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন।

(৮) নতুন অভিজ্ঞতার জন্য উন্মুক্ত থাকুন এবং অফিসিয়াল গোপনীয়তা বজায় রাখুনঃ পৃথিবী খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের। এসব নতুন অভিজ্ঞতার সাথে নিজেকে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিন। আপনার নিজস্ব বিশ্বাস বা মতাদর্শ সম্পর্কে সজাগ এবং সতর্ক থাকুন। অফিসে নিজের কোন বিশ্বাস নিয়ে অযথা আড্ডা দেয়া বা অন্যের বিশ্বাসকে অসম্মান করা এসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন কোন কথা কারো সাথে শেয়ার করবেন না যাতে সেই কথা গোপন রাখার জন্য অনুরোধ করতে হয়। নিশ্চিত থাকুন, আপনি কারো স্পর্শকাতর কথা অন্য কারো সাথে শেয়ার করলে অন্যরাও আপনার স্পর্শকাতর কথা আরো অনেকের কাছে শেয়ার করবেই।

মৌলিক আরো কিছু বিষয় অফিসে মেনে চলুন। যেমন অফিসের নিয়মাবলী মেনে চলা, সময় বজায় রাখা, ব্যক্তিগত সমস্যার সুযোগ না নেওয়া, নিজের সমস্যা হাইলাইট করা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। দেখবেন অফিস আপনাকে কখনোই ছাড়িয়ে দেবে না বরং আপনি আরো ভালো সুযোগ পেয়ে উচ্চ অবস্থানে চলে যেতে পারছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *